অনলাইন ডেস্ক ::
বাংলাদেশে একটি বড় বন্যা ধেয়ে আসছে। এবার উজানের ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা ও তিস্তা অববাহিকায় পানির উচ্চতা ৭৫ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ১৯ আগস্টের মধ্যে ওই পানি বাংলাদেশের নদ-নদীগুলো দিয়ে প্রবেশ করতে পারে। এর ফলে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় বন্যা হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যার পূর্বাভাসবিষয়ক দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থা।
সংস্থা দুটির বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই বন্যা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ১৯৮৮ সালের বন্যাকেও ছাপিয়ে যেতে পারে।
আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে যমুনা, তিস্তা, ধরলা, আত্রাইসহ সব প্রধান নদ-নদীর পানি বেড়েছে। উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের ১৪ জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ে বন্যার পানি কমলেও রংপুর বিভাগের অন্য ছয় জেলায় বন্যার পানি আরও বেড়েছে। দিনাজপুরে বন্যার পানিতে ডুবে নারী-শিশুসহ ১৩ জনের মৃত্যু।
জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের কার্যালয় (ইউএনআরসিও) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ গবেষণাকেন্দ্র (জেআরসি) বৈশ্বিক বন্যা পরিস্থিতিবিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ১০ আগস্ট সংস্থাটির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ভুটান ও নেপালের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার অঞ্চলগুলোতে গত শুক্রবার থেকে পানি বাড়ছে এবং ১৯ আগস্ট পর্যন্ত এই পানি ভাটির দিকে প্রবাহিত হতে পারে। ২০০ বছরের বেশি সময়ের ইতিহাসে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার উজানে বন্যার মাত্রা সবচেয়ে ভয়াবহ হতে পারে।
দ্য ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম-রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্টসের (ইসিএমডব্লিউএফ) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ১০ দিনের মধ্যে হিমালয়ের দক্ষিণাঞ্চলে ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে করে ব্রহ্মপুত্রের ভারত ও বাংলাদেশ অংশে পানি বাড়বে।
এ ব্যাপারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাতবলেন, এবার ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের কবলে পড়ে চীন ও ভারতে ইতিমধ্যে ভয়াবহ বন্যা শুরু হয়ে গেছে। ওই দুই দেশের ভেতর দিয়ে আসা ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা নদীর পানি স্মরণাতীত কালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে ১৯৮৮ সালের চেয়ে বড় ও ভয়াবহ বন্যা হতে পারে। এ জন্য তিনি সরকারি-বেসরকারি সব সংস্থাকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে পরামর্শ দেন।
আজ সোমবার দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য বন্যা বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে। ইতিমধ্যে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনার বাংলাদেশ অংশে গড়ে ৫০ সেন্টিমিটার ও গঙ্গা-পদ্মায় ১৫ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। ফলে ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ও তিস্তা অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছে সরকারি এই সংস্থা।
পানি ওঠায় পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও নেত্রকোনায় সহস্রাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে।
নীলফামারীর সৈয়দপুর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী ও রংপুরের বদরগঞ্জে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মহাসড়কে পানি ওঠায় ঢাকা-দিনাজপুর সরাসরি পথে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে তিনটি পথে রেলযোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উত্তরাঞ্চলে তিন প্লাটুন সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তাঁরা উদ্ধার ও বাঁধ রক্ষার কাজ করছেন।
দেশের নদী ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের এখন সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। বন্যা মোকাবিলাবিষয়ক সরকারের সব কটি স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় দপ্তরকে প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে আজ সোমবারের জন্য দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের সব বিভাগেই আজ মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হয়ে সেখানে ভূমিধস হতে পারে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের শিক্ষক গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, ‘বর্তমানে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। ২১ আগস্ট অমাবস্যা। অপর দিকে আসামে বড় ধরনের বন্যা হচ্ছে। এই পানি নেমে আসতে তিন-চার দিন সময় লাগবে। আবার আমাদের ব্রহ্মপুত্র ও পদ্মা অববাহিকায় পানি বাড়ছে। পদ্মার পানি এখনো বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও যেভাবে বাড়ছে, তাতে ১৯ তারিখের মধ্যে এ সীমা অতিক্রম করতে পারে। দুই নদীর পানি একসঙ্গে বেড়ে বড় বন্যা হতে পারে।’ প্রথম আলো
পাঠকের মতামত: